২১ অক্টোবর ২০১৮
আগামী জাতীয় নির্বাচনে জনগণ ভোট না দিলে কোনো আফসোস করবেন না প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জানিয়েছেন, তিনি চেয়েছিলেন টানা দুই মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে। সেটি করতে পারায় এক ধরনের তৃপ্তি আছে।
সৌদি আরব সফর শেষে দেশে ফিরে রবিবার রাজধানীতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্মেলনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
দেশের উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে আবার আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে হবে।
‘উন্নয়নের সাথে সাথে মানুষের আর্থসামাজিক উন্নতি বাড়বে। গ্রাম পর্যন্ত মানুষের আর্থিক সচ্ছলতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাতো ধরে রাখতে হবে। কাজেই বাংলাদেশের জনগণ যদি মনে করে এই উন্নয়নের ধারা ধরে রাখতে হবে। আমি আশা রাখি নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দেবে।’
টানা দুই দফা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ একেবারে শেষ পর্যায়ে। আগামী মাসের শুরুতেই ঘোষণা হতে যাচ্ছে একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল। সেই বিষয়টির উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের হাতে সময় হচ্ছে কম। নির্বাচন প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে শুরু। আগামীকাল সংসদ বসছে। আমাদের পাঁচ বছরের শেষ বৈঠক হবে। এরপর নির্বাচন প্রক্রিয়া। নির্বাচনে জনগণ যদি ভোট দেয় হয়তো নির্বাচিত হয়ে আসব। আর যদি ভোট নাও দেয় আমার কোনো আফসোস নেই।’
‘বাংলাদেশকে উন্নয়নের যে ধারাটা আমরা শুরু করেছি, আমি চাই সেই ধারাটা যেন অব্যাহত থাকে আপনারা সেটা দেখবেন।’
‘সামনে নির্বাচন রেখে সকলেই ভোট চায়। আমরাও ভোট চাই। যাতে করে উন্নয়নের ধারাটা অব্যাহত রাখে।’
‘আমিতো বলেই দিলাম। আমার খুব একটা আফসোস নেই। আমার লক্ষ্যই ছিল দুই বার যদি চালাতে পারি তাহলে উন্নয়নটা দৃশ্যমান হবে। পদ্মাসেতুও দৃশ্যমান হচ্ছে।’
১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের উন্নয়নে নেয়া নানা উদ্যোগ পরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘যে কাজগুলো করেছিলাম, যখন দেখলাম একে একে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে। সত্যি খুব দুঃখ লেগেছে।’
‘আমরা দেখলাম যে, আমাদের স্বাক্ষরতার হার কমে সেই ৪৫ ভাগে নেমে এসেছে। এটা কি করে হয় আমি জানি না। কারণ একটা দেশতো সামনের দিকে এগিয়ে যায়, পিছিয়ে যায় এটা আমরা দেখিনি।’
‘স্বাক্ষরতার হার ৬৫ ভাগ থেকে কমে চলে আসে ৪৪ ভাগে। কমিউনিটি ক্লিনিকতো বন্ধই হয়ে গেল। খাদ্য উৎপাদন আমি ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি দিয়ে শুরু করেছিলাম ১৯৯৬ সালে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্নতা অর্জন করি। ২০০১ এ ২৬ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য রেখে যাই। ফিরে এসে ২০০৮ সালে দেখি ৩০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি আছে। সর্বক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে গিয়েছিলাম।’
সরকারের বর্তমান আমলে নেয়া নানা উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘৩২০০ মেগাওয়াট পাওয়ার থেকে আমরা এখন ২০০০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের লক্ষ্য আরো সামনে, অনেক বেশি। এভাবে সর্বক্ষেত্রে আমরা যে কাজ করে যাচ্ছি উন্নয়নের জন্য।’
‘আজকে আমরা খাদ্যে স্বয়ং সম্পন্ন। স্বাক্ষরতা হার ৭৩ ভাগে উন্নতি করতে স্বক্ষম হয়েছি। …উচ্চ শিক্ষায় লোন দেই যাতে আমাদের ছেলে মেয়েরা কারিগরি শিক্ষা যাতে পায়, বিজ্ঞান প্রযুক্তি যাতে পায় তারও ব্যবস্থা নিয়েছি।’
‘গবেষণায় একটি টাকাও ছিল না। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নেহায়েত যতটুকু প্রয়োজন সেইটুকু তারা গবেষণা করতেন। ১৯৯৬ সালে প্রথম গবেষণায় থোক বরাদ্দ দিয়, প্রথমবার ১২ কোটি টাকা দেই। পরের বাজেটে আমরা গবেষণা ও প্রযুক্তিখাতে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ আলাদাভাবে রাখতাম।’
‘আর নিজের ভাগ্য গড়ার যাদের মাথায় থাকে তারা দেশকে কী দেবে মানুষকে কী দেবে?- শিক্ষকদেরকে ভেবে দেখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
বাবার কাছেই সব শিখেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তো নিজের কথা চিন্তা করতে কখনো শিখিনি। আমরা যা শিখেছি বাবার কাছ থকে শিখেছি। যতোটা স্যাক্রিফাইস করা যায়। কোনো মহৎ অর্জনের জন্য মহান ত্যাগের প্রয়োজন। এটাই তিনি শিখিয়েছেন, আমরা তাই শিখেছি। আর সেভাবে কাজ করতে চেষ্টা করেছি বলেই আজকে বাংলাদেশ ২০০৯ সাল থেকে এই ২০১৮ উন্নয়নটা করতে পেরেছি।’
অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ নির্মাণে শিক্ষকদের কাজ করারও আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চাই। কুপমণ্ডুকতা বা সাম্প্রদায়িকাতা কোনো কিছুই যেন আমাদের গ্রাস করতে না পারে। আমরা উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করতে পারি।’
সূত্র: ঢাকা টাইমস