বাঙালিয়ান ডেক্স:
গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সংলাপে বসতে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে এই বৈঠকের আহ্বান জানিয়ে আমন্ত্রণপত্র দেয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্রে লেখা রয়েছে, ‘সালাম ও শুভেচ্ছা নিবেন। আপনার ২৮ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের পত্রের জন্য ধন্যবাদ। অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই, আলোচনার জন্য আপনি যে সময় চেয়েছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখ সন্ধ্যা সাতটায় আপনাদের আমি গণভবনে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।’
দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করা দল বিএনপি ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়ে আসছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের কথায় কর্ণপাত করেনি।
এজন্য ক্ষমতাসীন দলটির নেতারা দশম সংসদ নির্বাচনের আগে আলোচনার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে টেলিফোন করে শেখ হাসিনার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টি বলে আসছিলেন।
দুর্নীতির মামলায় দণ্ড পেয়ে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়ার কারাবন্দি হওয়া এবং গ্রেনেড হামলা মামলায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলায় খালেদার ছেলে তারেক রহমান দোষি সাব্যস্ত হওয়ার পর থেকে আওয়ামী নেতারা বলে আসছিল ‘খুনিদের’ সঙ্গে সংলাপ নয়।
গত ১৩ অক্টোবর গণফোরাম সভাপতি ড. কামালের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দিয়ে সাত দফা দাবি তুলে তা নিয়ে নতুন করে সংলাপের আহ্বান জানানো হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফায় খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের যে দাবি রয়েছে, যা সংবিধানসম্মন নয় বলে আওয়ামী লীগ নেতারা বলে আসছিল।
এরপর সোমবার সন্ধ্যায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দেওয়া সংলাপ প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ।
কাদের বলেন, আমাদের নেত্রীর পক্ষ থেকে বলতে চাই, শেখ হাসিনার দরজা কারো জন্য বন্ধ হয় না, বন্ধ থাকে না। এর মধ্য দিয়ে আপনারা বুঝতে পারছেন যে আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রস্তাবে সম্মত। আমরা ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের সঙ্গে সংলাপে বসবো।
কাদেরের বক্তব্যের পর মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে পাঠানো আমন্ত্রণপত্র ড. কামাল হোসেনের কাছে পৌঁছে দেন আ.লীগের দপ্তর সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ।
গোলাপ বলেন, ‘অনেক ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধান সম্মত সকল বিষয় আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর দ্বার সর্বদা উন্মুক্ত। তাই ওনারা (ঐক্যফ্রন্ট) আলোচনার জন্য যে সময় চেয়েছেন, তারাই পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ১ নভেম্বর সন্ধ্যা সাতটায় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে তাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সেই আমন্ত্রণপত্রটি আমি সরাসরি ড. কামাল হোসেন সাহেবের হাতে তুলে দিয়েছি।’
আমন্ত্রণপত্র হস্তান্তরের সময় উপস্থিত থাকা গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘আমরা ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে সংলাপের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছিলাম। তারপর ওনারা জানিয়ে দিয়েছিলেন খুব তাড়াতাড়ি বসবেন। ওনারা আমাদের ১ নভেম্বর আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।’
সংলাপে অংশ নিতে কতজন যাবেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা কয়জন যাচ্ছি, কে কে যাচ্ছি সেই তালিকাটা ওনারা জানতে চেয়েছেন। আমরা আজকেই সেই তালিকা দেবো। আমাদের জোটের দলসমূহের নেতৃবৃন্দ যারা আছেন তাদের মধ্যে ১৫ জনের কমবেশি হতে পারে।’
এক প্রশ্নের জবাবে মন্টু বলেন, ‘শুধু সাত দফা না, সাত দফাসহ অন্যান্য বিষয় এবং বর্তমান যেসব ইস্যু আছে সবগুলো নিয়ে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য আমরা ওনাকে (শেখ হাসিনা) অনুরোধ করবো। এজন্য উনি যদি আমাদের কাছে কোনো সাহায্য সহযোগিতা চান, তা অবশ্যই আমরা করব।’
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘ড. কামাল হোসেন সাহেব যেহেতু সংবিধান প্রণেতাদের অন্যতম, তাই তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যাটা দিতে পারবেন। বিষয়টা আমরা ওনার উপরে ছেড়ে দিচ্ছি। তিনি আমাদের নেতৃত্ব দেবেন।’
মন্টু বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে আছেন। আমরা ওনার কাছে আবেদন করবো জাতিকে এ সংকট থেকে রক্ষা করার
গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রধানমন্ত্রী দেয়া চিঠিটি সাংবাদিকদের পড়েও শোনান।
ঢাকা টাইমস